২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শনিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মোহাম্মদ আলী, বাবুগঞ্জঃ বরিশালের বাবুগঞ্জে সন্ধ্যা, সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন একশ্রেণীর অসাধু মাছ শিকারী। তবে এরা শুধু নদীতেই নয় বিভিন্ন মাছের ঘের এবং খালেও কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ পদ্ধতিতে শিকার করা মাছ খেলে যেমন কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকারক তেমনি মাছের বংশ বিনষ্ট হবার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে নদীতে স্রোতের গতিবেগ কমে আসার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে বিষ প্রয়োগ করতে শুরু করে এই অসাধু চক্র। বিষ প্রয়োগে শিকার হওয়া মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। বিগত সময়ে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে আসছিলো যে চক্র সেই চক্রের লোকজন এবারও বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন। এই বিষ প্রয়োগ চক্রের লোকজন আরও সক্রিয় হয়েছেন এবার।
বিভিন্ন বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ীর দোকান থেকে এই বিষ তারা ক্রয় করেন। পরে রাতের অগ্রভাগে অথবা রাতের শেষ ভাগে নদীর কিনারে নির্দিষ্ট স্থানে বিষ প্রয়োগ করেন। কিছু সময় পর এই বিষের তীব্র দুর্গন্ধের অসহ্য যন্ত্রণায় ছোট বড় চিংড়ি মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ লাফিয়ে উঠে শুকনায়। পরে এসব মাছ তারাই নদীর কিনার থেকে কুড়িয়ে তোলেন। পরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন এই মাছ। বিষ প্রয়োগের ক্রিয়া শুরু হতে কিছু সময় পার হওয়ায় এই চক্রের লোকজনকে কেউ সহজে ধরতে পারেননি। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রকৃত মৎস্যজীবীদের।
বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামের মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে উপজেলার বিভিন্ন নদী ও খাালে বিষ প্রয়োগ করে অসাধু চক্রের লোকজন মাছ শিকার করে চলেছেন। এভাবে মাছ শিকার বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।
প্রতক্ষ্যদর্শী বাবুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রহমতপুর ইউনিয়নের রাজকর এলাকার একটি খালে কে বা কাহারা কীটনাশক প্রযোগ করে। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খালের পানির উপরিভাগে ভাসতে দেখে স্থানীয় জনগণকে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, শুকনা মৌসুম আসলে নদীতে পানি স্রোতের গতিবেগ কমে আসে। এই সময় অসাধু মাছ শিকারীরা নদীতে বিষ প্রয়োগ করেন। কিছুক্ষণ পর বিষের তীব্র দুর্গন্ধে নদীর কিনারে ভেসে উঠে মাছ। চিংড়ি মাছ শুকনায় লাফিয়ে উঠে। এসময় যারা বিষ প্রয়োগ করেন তারাই আবার সাধু সেজে নদীর কিনার থেকে মাছ কুড়িয়ে নেন। প্রকৃত বিষ প্রয়োগকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আর মৎস বিভাগ বলছে, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এব্যাপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুবাস সরকার জানান, কেমিক্যাল দিয়ে মাছ শিকার করা হলে, এগুলো মাছের চেয়ে মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এসব মাছ খেলে কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপি- অকেজোর মতো জটিল রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
বাবুগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, মাছের ঘেরে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকারের অভিযোগ পেয়েছি। খুব শীগ্রই প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।